শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৪৯ পূর্বাহ্ন

News Headline :
মানববন্ধনের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন শ্যামনগরে গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে সড়কে ভ্যান চালকের মৃত্যু রাজশাহীর মোহনপুরে মদ পানে ৩ জনের মৃত্যু, গ্রেফতার ২ রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র সাতটি থানার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা যানজট নিরসন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে আরএমপি’র মতবিনিময় সভা শ্যামনগরে এবার কৃষকরা আমন ধানের আশানুরুপ ফলন পেয়েছে পাবনায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত ১জন আহত শাজাহানপুরে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে ছাত্রদলের দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত মান্দায় বিল উন্মুক্তের দাবিতে জেলেদের সংবাদ সম্মেলন সভাপতির স্বৈরাচারী আচরন স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতিতে পাবনা শহর সমাজ সেবা কার্যালয়ের কার্যক্রম স্থবির

‘আল্লাহকে বুলি আমাকে এই চরে মরণ দিও’

Reading Time: 2 minutes

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাজশাহী:
‘জন্ম এই পদ্মার চরে। এই চরে থ্যাকি থ্যাকি বয়স শেষ হয়ে গেল। আমার অন্য জায়গায় য্যা থ্যাকতে ইচ্ছে করে না। আল্লাহকে বুলি আমাকে এই চরে মরণ দিও।’
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন চর খিদিরপুরের বাসিন্দা কাইমুদ্দিন সরকার। ৯৬ বছর বয়সী কাইমুদ্দিন সরকারের বাবা ফজল সরকারও এই পদ্মার চরে মারা গেছেন। স্ত্রী হাওয়া বিবিও মারা গেছেন। কাইমুদ্দিন সরকারের পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে। এর মধ্যে তিন ছেলে ও এক মেয়ে থাকেন পদ্মার চরে। কাইমুদ্দিন সরকার বলেন, দাদা-দাদির বাড়ি ছিল ভারতে। সেখানে বাপেরা থাকেনি। এদেশে চলে আসে। আমরাও আর যাইনি ভারতে। আগে আমার বাড়ি ছিল। নদী ভাঙনে বিলীন হওয়ায় চর খিদিরপুরে আসি। পদ্মার ভাঙনে মধ্য চরে চলে আসি। মধ্য চর ভেঙে যাওয়ার পরে আরও দুই-তিন চরে বসবাস করি। সেগুলোও ভেঙে গেছে। সর্বশেষ এই নতুন খিদিরপুরের চরে বাড়ি করেছি। এখন এই চরেই থাকে। এই চরে অনেক মানুষ বসবাস করে। তিনি আরও বলেন, তিন ছেলে-মেয়ে থাকে পদ্মার চরে। বাকিরা ওপারে (রাজশাহী শহরে) থাকে। আমি তাদের বাড়িতে যাই। ছেলেরা বলেছিল তুমি চলে আসো, এখানে থাকো। আমার একটু অসুবিধা, শহরে থাকতে ভালো লাগে না। একদিন-দুইদিন পরে জান ছটফট করে, থাকতে পারি না। সবাই কত মন খারাপ করে। নাতিপুতিরা আসতে দেয় না পদ্মার চরে। নাতিরা বলে, চরে কি করতে যাবা। ওখানে কি আছে। এখানে থাকো। তার পরও চলে আসি চরে। কিন্তু তারা এখন বুঝে গেছে, আমি চর ছাড়া থাকতে পারবো না। তাই তারাও অতোটা জোড় করে না আমাকে।
কাইমুদ্দিন সরকার বলেন, ৬০ থেকে ৭০ বছরের পুরোনো চর ছিল খিদিরপুর। খিদিরপুরের সেই জায়গাটা অনেক ভালো ছিল। সেখানে স্কুল, মসজিদ, খেলার মাঠ সব ছিল। কিন্তু ভাঙনে সবাই দিকবিদিক চলে গেছে ইচ্ছে মতো। অনেকেই শহরে চলে গেছে, অনেকেই চরে থেকে গেছে। কিন্তু আমি যেতে পারিনি চর ছেড়ে। এই চরে খোলামেলা জায়গা আমার ভালো লাগে। ছেলেদের বাড়িতে বেড়াতে গেলে দম বন্ধ হয়ে আসে। ভালো লাগে না। আমি নাতিদের বলি আমাকে নৌকায় তুলে দে- আমি চরে যাব। কাইমুদ্দিন সরকারের নাতি আমিনুল ইসলাম বলেন, দাদার শরিফা নামে এক মেয়ের চরে বিয়ে হয়েছে। সেই সুবাদে তিনি চরের বাসিন্দা। মোছা. তহুরা নামে আরেক মেয়ের বিয়ে হয়েছে চারঘাটের নন্দনগাছী ইউনিয়নে। এছাড়াও দাদার ছেলে মাহিদ, গাজলু ও বজু থাকেন চর খিদিরপুরে। আর নদীর উত্তরে রাজশাহী শহরে থাকতেন সাইদুর ও সেলু। তারা মারা গেছেন। তিনি বলেন, চরে অনেক সমস্যা। বিদ্যুৎ নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না। অসুখ হলে ওষুধ পাওয়া যায় না। এই পার (রাজশাহী) থেকে চিকিৎসা করিয়ে নিয়ে যেতে হয় দাদাকে। তার পরেও দাদা চরেই থাকতে পছন্দ করেন। কিছু দিন আগে দাদার চোখের অপারেশন করা হয়। তার দুই চোখ ভালো আছে। চশমা লাগে না। অপারেশনের পর কয়েকদিন পরে তিনি এখানে ছিলেন। আবার তিনি চরেই চলে গেছেন। চরে এমন হাজারো মানুষ আছে। যাদের শহরে নিয়ে এসে কেউ রাখাতে পারবে না। কারণ তারা খোলামেলা জায়গায় থেকে অভ্যস্ত।
রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, চরে এমন অনেক মানুষ আছে যারা শহরে এসে থাকতে চায় না। সেখানে বিদ্যুৎ নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না। তারপরও তারা চরের মায়া ছাড়তে পারেন না। তাদের অসুখ-বিসুখ কম।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com